স্বদেশ ডেস্ক:
ঘূর্ণিঝড় রেমাল আজ রোববার রাত ৯টায় সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করবে। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল তার সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করতে যাচ্ছে রাত ৯ টার মধ্যে। এই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘন্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার আশঙ্কা রয়েছে।
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, রেমেল সর্বোচ্চ গতিবেগের (১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার) বাতাস নিয়ে উপকূলে আঘাতের কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয়ে জেলাগুলোর জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ব্যাপক প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। আজ রবিবার রাতের জোয়ারের সময় সাতক্ষীরা, খুলনা বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ও নোয়াখালী জেলার নদ-নদী ও চর অঞ্চলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে। ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা আছে মধ্যরাত নাগাদ।
তিনি জানান, যেসব জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো : খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ এলাকা। এসব জেলা আঘাতের সবচেয়ে ঝূঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে আজ বিকেল তিনটা থেকে চৌদ্দটি জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত সহ দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। এটি যতই উপকূলের দিকে আসবে ততই দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবে।’
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত নাগাদ সময়ে মোংলার কাছ দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর আগে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবতী অংশের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ৮-১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসও হতে পারে।
রিমাল-এর গতিবেগ সম্বন্ধে রহমান ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে এটি অত্যন্ত ভয়াবহ হতেও পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়াজনিত সতর্ক সংকেতের মাপকাঠিতে এটাই সর্বোচ্চ সংকেত।
দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত মানে হলো ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমকালে বন্দর ঝড়ের তীব্রতার কবলে পড়তে পারে। বন্দরের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়েই ঝড় উপকূল অতিক্রম করবে।
এরপরে রয়েছে ১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত, যার মানে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
রিমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ– বালি। এটি ওমানের দেয়া নাম।
তবে, রিমাল নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়েছে বলে এর আগে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।